সমর্থকদের মন জয় করে, আফগানিস্তানের কাছে ৩-২ হেরে গেলো বাংলাদেশ
এম. এ রনি | প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩৪; আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ০২:৪২
২০২৪ এশিয়ান কাপ অনূর্ধ্ব-১৭ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ দলটির পারফরম্যান্সের মাধ্যমে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এই দলটি তাদের গঠন, শক্তি এবং দক্ষতা দিয়ে কেবলমাত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়নি, বরং বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বয়সভিত্তিক পর্যায়ের এই দলটি অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে গঠিত সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ব্যালেন্সড দলগুলোর মধ্যে একটি। তাদের খেলা বাংলাদেশের জাতীয় দলের জন্য অনুপ্রেরণার বার্তা হয়ে উঠেছে, যেখানে তারা দলীয় সংহতি ও একাগ্রতা বজায় রেখে প্রতিপক্ষের উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করেছে এবং নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে সমর্থকদের মন জয় করেছে।
২০২৪ এশিয়ান কাপ অনূর্ধ্ব-১৭ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের ফুটবল দল অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে দেশের ফুটবল সমর্থকদের মন জয় করেছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ বি-তে কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, ম্যাকাও এবং আফগানিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যেখানে তারা একাধিক দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি এবং টেকনিক্যাল দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে বাংলাদেশের কোচ সাইফুল বারী টিটুর পরিচালনায় দলের খেলোয়াড়রা আক্রমণ এবং রক্ষণাত্মক উভয় ক্ষেত্রেই একটি সংঘবদ্ধ এবং সুশৃঙ্খল পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে।
প্রথম ম্যাচে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলের পরাজয়ের পর দলের আত্মবিশ্বাস কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, পরবর্তী ম্যাচগুলোতে খেলোয়াড়রা নিজেদের খেলায় মনোযোগ রেখে মাঠে নেমেছে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ফিলিপাইনসকে ১-০ গোলে পরাজিত করে। তৃতীয় ম্যাচে, ম্যাকাওয়ের বিপক্ষে ৭-০ গোলে জয়লাভ করে তারা একটি বড় জয় উপহার দেয়। এই জয়ের মাধ্যমে দলের মনোবল বেড়ে যায় এবং তারা মাঠে প্রতিপক্ষের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে খেলার শক্তি প্রদর্শন করে।
গ্রুপ পর্যায়ের চূড়ান্ত ম্যাচে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের সাথে ৩-২ ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এই ম্যাচটি ছিল অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এবং গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই ম্যাচটি সরাসরি বাছাইপর্বে বাংলাদেশ দলের অগ্রগতি নির্ধারণ করতে সক্ষম ছিল। মিঠু চৌধুরীর ছয় মিনিটের গোলে বাংলাদেশ ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায়, তবে আফগানিস্তান ৩০তম মিনিটে ইয়াসির সাফির একটি গোলে সমতা ফিরিয়ে আনে। বিরতির কিছুক্ষণ আগে মুর্শেদ আলীর ডিফ্লেক্টেড শটে বাংলাদেশ পুনরায় লিড নেয়, তবে দ্বিতীয়ার্ধে আফগানিস্তানের মিলাদ নুরি ও আরশাদ আহমাদি সমতা ফিরিয়ে এনে এবং ম্যাচের নির্ধারক গোলটি করে জয় নিশ্চিত করে।
এই টুর্নামেন্টে প্রবাসী খেলোয়াড় আরহাম ইসলামের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ দলের শক্তি আরও বাড়িয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন ইউনাইটেডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে দলে যোগ দিয়ে আরহাম তার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং টেকনিক্যাল স্কিলের মাধ্যমে দলের আক্রমণাত্মক শক্তিকে আরও উন্নত করে তুলেছেন। তার উপস্থিতি দলের আক্রমণ পরিকল্পনায় নতুন কৌশল এবং দক্ষতা এনেছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের ফুটবলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
দলটির প্রধান কোচ সাইফুল বারী টিটু, সহকারী কোচ আবুল হোসেন, আতিকুর রহমান মিশু এবং ম্যানেজার হিসেবে প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস ও কৌশলগত উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। টিটুর নির্দেশনায় দলটির রক্ষণ ও আক্রমণ উভয় ক্ষেত্রেই একটি সংঘবদ্ধতার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রতিটি খেলায়, দলটি তাদের মেধা এবং মনোবল দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে, যা তরুণদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের অভিজ্ঞতায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এই পারফরম্যান্স দেশের ফুটবলের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। দেশের তরুণ ফুটবলারদের জন্য এমন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: