ঢাকা রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

.

তরফদার রুহুল আমিন: বাফুফে নির্বাচনকে রসিকতায় পরিণত করলেন, আবারো সরে গেলেন

এম. এ রনি | প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:০৬; আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০০:৪৬

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনটা ছিল নাটকীয়। সিনিয়র সহসভাপতি পদপ্রার্থী তরফদার রুহুল আমিন আজ নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন সিনিয়র সহসভাপতি পদে মো. ইমরুল হাসান একক প্রার্থী হওয়ায় তাঁর নির্বাচিত হওয়া সময়ের ব্যাপার।

তরফদার রুহুল আমিনের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন নিয়েই নাটকীয়তা তৈরি হয়। আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করার সুযোগ ছিল। বেলা দুইটার একটু আগে প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেন তরফদার। তবে তিনি আবেদনপত্রটি নির্বাচন কমিশন বরাবর না পাঠিয়ে পাঠান বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বরাবর। নিয়মানুযায়ী, আবেদনপত্র না পাঠানোয় তাঁর আবেদন গৃহীত হবে কি না, এ নিয়ে বিতর্কও উঠেছিল। তবে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহউদ্দিন জানান, ‘তরফদার রুহুল আমিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। যে ভুলটি আবেদনপত্রে ছিল (নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন না করে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বরাবর করা) সেটি করণিক ভুল। আমরা তাঁকে সেই ভুল শোধরানোর সময় দিয়েছি। তিনি ভুল শুধরে নতুন করে আবেদনপত্র পাঠালে সেটি গৃহীত হয়েছে।’

তরফদার রুহুল আমিন, যিনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ করে ফুটবল অঙ্গনে একজন গুরুত্বপূর্ণ নাম, বাফুফে (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করে বেশ কয়েকবার আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন। তিনি নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বারবার সরে দাঁড়িয়েছেন, যা অনেকের কাছে একধরনের রসিকতা ও অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। ফুটবলপ্রেমীরা এবং বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন, তরফদার রুহুল আমিন কি সত্যিই ফুটবলের উন্নয়নের জন্য নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, নাকি তার এই পদক্ষেপগুলো ছিল নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি কৌশল?

নির্বাচন নিয়ে নাটকীয়তার সূচনা: তরফদার রুহুল আমিন গত বাফুফে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন, তখন অনেকেই আশা করেছিলেন যে, তিনি ফুটবলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের মালিক হিসেবে তার প্রভাবশালী অবস্থান ও অভিজ্ঞতা তাকে একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই তিনি আকস্মিকভাবে তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন, যা নিয়ে দেশের ফুটবল অঙ্গনে এক ধরনের বিভ্রান্তি এবং সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এরপর আবারও তিনি ২০২৪ বাফুফে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কিন্তু পুনরায় আজ ২০ অক্টোবর সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান। গত কয়েকদিন পূর্বে তিনি এক সংবাদ সম্বেলনে বলেছিলেন, এবারের নির্বাচনে তিনি এক শক্তিশালী জোট করবেন, কিন্তু ২০ অক্টোবর তিনি নিজেই নির্বাচন থেকে তার প্রত্যাহর করে নিলেন। তার এই পদক্ষেপগুলো অনেকের কাছে ফুটবলের প্রতি তার আসল ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, তরফদার রুহুল আমিন কেবল নিজের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য বাফুফেতে আসার চেষ্টা করছিলেন এবং নির্বাচনের নামে এই নাটকীয়তা তার রাজনৈতিক ও কৌশলগত চালের অংশ।

নিজের স্বার্থে প্রার্থী হওয়ার প্রশ্ন: তরফদার রুহুল আমিনের বাফুফে নির্বাচন নিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার বিষয়টি ফুটবলপ্রেমী এবং বিশ্লেষকদের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, তিনি কি আসলেই ফুটবলকে ভালোবাসেন, নাকি তার প্রার্থী হওয়ার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র নিজের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা? তার ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান থাকলেও তার ব্যবসায়িক মনোভাব এবং রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন করে তুলেছে।

বাফুফের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য একজন নেতা শুধু ব্যবসায়িক চিন্তা নয়, ক্রীড়ার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধও থাকা উচিত। তরফদার রুহুল আমিনের নির্বাচন নিয়ে বারবার মন পরিবর্তন তার নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। এটি দেশের ফুটবলকে রসিকতায় পরিণত করেছে এবং ভবিষ্যতে তার নেতৃত্বে ফুটবলের উন্নয়ন কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে।

নির্বাচনকে সার্কাসপর্যায় নিয়ে গেলেন তরফদার রুহুল আমিন, ফুটবলপ্রেমীদের মতে, তরফদার রুহুল আমিনের বাফুফে নির্বাচন নিয়ে নাটকীয়তা দেশের ফুটবল অঙ্গনকে সার্কাসে পরিণত করেছে। তার একের পর এক মনোনয়ন প্রত্যাহার, এবং নতুন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলে আবারো সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত অনেকের চোখে একধরনের রাজনৈতিক কৌশল এবং ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষার চাল হিসেবে ধরা পড়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, তরফদার রুহুল আমিনের বাফুফে নির্বাচন নিয়ে যে নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের ফুটবল অঙ্গনের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি এবং পরবর্তীতে সরে দাঁড়ানোর ঘটনাগুলো তাকে ফুটবলের উন্নয়নে নয় বরং নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করছেন বলে ধারণা দিয়েছে। দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমী ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রয়োজন, যা তরফদার রুহুল আমিনের কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top