হাসান মাহমুদ ৫ ও নাহিদ রানার ৪ ইউকেট শিকার
ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৩ রান
সংবাদ প্রতিদিন | প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২১; আপডেট: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:০৬
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে বাগড়া বাধাল প্রকৃতি। চা বিরতির পর খেলা হলো মাত্র এক ওভার। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে বন্ধ হয়ে গেল চতুর্থ দিনের খেলা। বাংলাদেশের দুই ওপেনারের শেষবেলার রোমাঞ্চ মাটি করে দিল আলোক স্বল্পতা। তবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখেই পঞ্চম দিনে টার্গেটের বাকি ১৪৩ রান টপকাতে নামবে বাংলাদেশ। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ১০:৪৫ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচের শেষদিনের খেলা।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানার তোপে মাত্র ১৭২ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট পান হাসান আর নাহিদের শিকার ৪ উইকেট। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮৫ রানের। রান তাড়ায় আগ্রাসী ব্যাটিং করেন জাকির। ২৩ বলের ৩১ রান নিয়ে আছেন অপরাজিত, তার সঙ্গী সাদমানের রান ৯।
আগের দিন শেষ বিকালে পরপর দুই ওভারে হাসান মাহমুদের শিকার ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক ও খুররম শাহজাদ। দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে পাকিস্তানের লিড ছিল ২১ রানের, হাতে বাকি ৮ উইকেট। চতুর্থ দিনের সকালে নেমে শান-আইয়ুব খেলতে থাকেন স্বাচ্ছন্দ্যে। এই জুটি আলগা হয় আইয়ুবের বাজে শট নির্বাচনে। জুটিতে ৩৮ রান আসার পর তাসকিনকে লফটেড ড্রাইভ করতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন আইয়ুব। ফেরেন ৩৫ বলে ২০ রান করে।
পাকিস্তান অধিনায়ক শানও থিতু হয়ে পড়েছিলেন। দলকে ভালো জায়গায় নেয়ার মতন খেলছিলেন তিনি। তবে নাহিদের বলে গড়বড় করে তিনিও ফেরেন বাজে শটে। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দেন ৩৪ বলে ২৮ রান করে।
বাকি দুই উইকেট দারুণ দুই বলে শিকার ধরেন নাহিদ, ক্যাচ মিস না হলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেটও পেতে পারতেন তিনি। নাহিদ অবশ্য কাবু করেন বাবর আজমকে। বাবর এই সিরিজে খেলছেন নিজের ছায়া হয়ে। ছন্দহীন ব্যাটার নাহিদের আচমকা লাফানো বল সামলাতে পারেনি। ১১ রান করে নাহিদের বলে স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ। ঠিক পরের বলেই উইকেট পেতে পারতেন নাহিদ। স্লিপে রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন সাদমান ইসলাম। শূন্য রানে জীবন পেয়ে সেই রিজওয়ান পরে যোগ করেছেন ৪৩ রান।
রিজওয়ান বেশ কিছুটা সময় অস্বস্তি বাড়ালেও সাউদ শাকিল টিকতে পারেননি। নাহিদের ওই স্পেলেই কাটা পড়েন বাঁহাতি ব্যটার। বাংলাদেশের তরুণ পেসার গতি আর বাউন্সে নাজেহাল করে কুঁকড়ে রাখেন ব্যাটারদের। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে লিটন দাসের গ্লাভসে জমা পড়েন শাকিল, ১০ বলে করেন ২ রান।
১২৯ রানের লিড নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিলো পাকিস্তান। লাঞ্চ থেকে ফিরে রান বাড়িয়ে ফিফটির দিকে ছুটছিলেন রিজওয়ান। পাকিস্তানের লিড চলে গিয়েছিলো দেড়শোর কাছে। হাসান মাহমুদ নতুন স্পেলে ফিরে দারুণ দুই বলে থামিয়ে দেন পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। হাসানের বলে খোঁচা মেরে লিটনের গ্লাভসে জমা দেন ৪৩ করা রিজওয়ান। ঠিক পরের বলে স্লিপে মোহাম্মদ আলিকে ক্যাচ বানান হাসান।
একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটার সালমান আলি আঘা টেল এন্ডারদের নিয়ে চেষ্টা চালাতে শুরু করেন। তাকে বেশি সঙ্গ দিতে পারেননি আবরার আহমেদ। নাহিদের গতিময় আচমকা বাউন্স সামাল দিতে না পেরে আবরার ক্যাচ দেন স্লিপে।
মির হামজাকে নিয়ে এরপর শেষ উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ ২৭ রান যোগ করেন সালমান। ফিফটির দিকে থাকা সালমান অপরাজিত রয়ে যান ৪৭ রানে। হাসানের বলে মির হামজার ক্যাচ যায় স্লিপে। আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেয় পাকিস্তান। রিপ্লেতে পরিষ্কার বোঝা না যাওয়ায় মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস থামে ১৭২ রানে। ফলে টানা দুই টেস্ট জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিতে ১৮৫ রানের লক্ষ্য পায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
রান তাড়ায় শুরুতেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন জাকির। তার ব্যাটিং তাণ্ডবে মাত্র ৭ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪২ রান। ১ চারের সঙ্গে ২ ছক্কায় ২৩ বলে ৩১ রান নিয়ে জাকির ও ১৯ বলে ৯ রান নিয়ে সাদমান অপরাজিত আছেন। এরপরেই আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টির কারণে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। জয় থেকে ১৪৩ রান দূরে টাইগাররা। সফরকারীদের হাতে অক্ষত আছে ১০ উইকেটের সবক’টি।
তবে মঙ্গলবারও রয়েছে বৃষ্টির পূর্বাভাস। দিনের শুরু থেকেই আকাশে থাকতে পারে মেঘের উপস্থিতি। তাই হয়তো হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের বড় সুযোগ। অবশ্য ড্র হলেও সিরিজ জিতবে বাংলাদেশই।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: