3840

05/30/2023 মার্কিন ডলারের হাসিতে অন্যদের কান্না

মার্কিন ডলারের হাসিতে অন্যদের কান্না

ডেস্ক রিপোর্ট

৯ আগস্ট ২০২২ ০৪:১৬

মার্কিন ডলারের এখন দারুণ সুসময়। অন্য শীর্ষস্থানীয় মুদ্রাগুলোর তুলনায় চলতি বছর এর মূল্যমান বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি, যা গত দুই দশকের মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ। ডলারের মান এভাবে হু হু বাড়ায় মার্কিন পর্যটকদের জন্য বিদেশ ভ্রমণ হয়ে উঠেছে তুলনামূলক সস্তা। কিন্তু তার ঠিক উল্টো দশা বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেক লেনদেন হয় মার্কিন ডলারে। আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল প্রস্তুতকারক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিল হিসাব হয় ডলারে। সরকারগুলোকে বৈদেশিক ঋণও পরিশোধ করতে হয় বহুল প্রচলিত মার্কিন মুদ্রায়। ফলে রিজার্ভ কমে গেলে সমস্যায় পড়বে তারাও।

 
গত জুলাইয়ের শেষের দিকে রেকর্ড সর্বনিম্ন দরপতন হয়েছে পাকিস্তানি রুপির, যার ফলে দেউলিয়াত্বের প্রায় দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। ডলারের রিজার্ভ ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি খাদ্যের অভাবনীয় মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মিশর। তিনটি দেশকেই সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে যেতে হয়েছে।

ডলার ‘হাসলে’ অন্যরা কেন কাঁদে?
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি খুব শক্তিশালী হলে অথবা এর বিপরীত দশায়, অর্থাৎ দেশটির অর্থনীতি দুর্বল ও বিশ্ব মন্দার সম্মুখীন হলে মার্কিন ডলারের মূল্যমান বেড়ে যায়। উভয় পরিস্থিতিতেই বিনিয়োগকারীরা মার্কিন মুদ্রাকে লাভজনক এবং ঝড়ের আঘাত থেকে বাঁচতে এতে বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বলে মনে করেন। এ ঘটনাকে অনেক সময় ‘ডলারের হাসি’ বলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বাকি অংশের হাসার সুযোগ থাকে খুব কম। ডলার শক্তিশালী হলে বিশ্বের ছোট অর্থনীতির দেশগুলো যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার প্রধান তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন ইউবিএস ব্যাংকের উদীয়মান বাজারের ক্রস-অ্যাসেট স্ট্র্যাটেজির প্রধান মানিক নারাইন।

১. এটি আর্থিক চাপ বাড়ায়
প্রতিটি দেশের স্থানীয় মুদ্রায় অর্থ ধার করার ক্ষমতা নেই। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস নাও থাকতে পারে অথবা তাদের আর্থিক বাজার কম উন্নত। এর মানে, কারও কারও কাছে ডলারে ধার্য করা ঋণ নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

কিন্তু ডলারের মূল্যমান যদি বেড়ে যায়, তাহলে তাদের দায় পরিশোধ করা আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে, যা সরকারের কোষাগারের বাড়তি চাপ তৈরি করে।

এটি সরকার বা বেসরকারি ব্যবসায়ীর জন্য খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি আমদানিও ব্যয়বহুল করে তোলে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ডলারের বিপরীতে রুপির মানে ধস নামার পর শ্রীলঙ্কাতেও এটাই হয়েছিল।

২. বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়
একটি দেশের মুদ্রা নাটকীয়ভাবে দুর্বল হয়ে গেলে তখন ধনী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ তুলে নিতে শুরু করে এই আশায় যে, তারা এগুলো নিরাপদ কোথাও লুকিয়ে রাখবে। এটি মুদ্রার মান আরও নিচে ঠেলে দেয় এবং আর্থিক সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।

নারায়ণ বলেন, আপনি যদি এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় থাকেন এবং দেখেন, সরকার চাপের মধ্যে রয়েছে, তাহলে আপনার অর্থ বের করে নিতে চাইবেন।

৩. প্রবৃদ্ধি কমায়
ব্যবসা চালানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর যদি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির সামর্থ্য না থাকে, তাহলে তাদের উৎপাদন কম হবে। এর ফলে চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও তারা ততটা বিক্রি করতে পারবে না। এতে অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা কমে যাবে।

আবার, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গতিশীল থাকলে সেটি হয়তো কিছুটা ধাক্কা সামলাতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করে বহু উদীয়মান বাজার। কিন্তু ডলার শক্তিশালী হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র যদি মন্দার দ্বারপ্রান্তে থাকে, তখন এটি কঠিন।

বৈশ্বিক সংকটের হাতছানি
গত এক সপ্তাহে মার্কিন ডলারের দর ০.৬ শতাংশ কমেছে। তবে এর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমার সম্ভাবনা অন্তত নিকট ভবিষ্যতে নেই। ওয়েলস ফার্গো ইনভেস্টমেন্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গ্লোবাল মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট স্কট রেন ক্লায়েন্টদের উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক এক নোটে লিখেছেন, আমরা কাছাকাছি থেকে মধ্যবর্তী মেয়াদে ডলারের মান প্রায় অটুট থাকার সম্ভাবনা দেখছি।

এটি বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকদের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে যে, শ্রীলঙ্কা পতনের মুখে পড়া কেবল প্রথম দেশ কি না। তাছাড়া উদীয়মান বাজারগুলোর অস্থিতিশীলতা গোটা বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার প্রভাব হবে আরও ভয়াবহ।

মার্কিন থিংক-ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ব্র্যাড সেটসার বলেছেন, তিনি তিউনিসিয়াকে পর্যবেক্ষণ করছেন। দেশটি বাজেট ঘাটতি মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘানা ও কেনিয়ার ঘাড়ে ঋণের বিশাল বোঝা রয়েছে। এল সালভাদরের একটি বন্ড পেমেন্টের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। আর ২০১৮ সালের মুদ্রা সংকটের ধাক্কা এখনো সামলাতে পারেনি আর্জেন্টিনা।

আইএমএফের হিসাবে, বিশ্বের ৬০ শতাংশ নিম্নআয়ের দেশ বর্তমানে ঋণ সংকটের মধ্যে অথবা এর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। অথচ এক দশক আগেও এমন দেশের সংখ্যা ছিল মাত্র এক-পঞ্চমাংশ।

সূত্র: সিএনএন


যোগাযোগ: ৪৪৬ (৪র্থ তলা), নয়াপাড়া, ধনিয়া, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬
মোবাইল:
ইমেইল: sangbadprotidinnews24@gmail.com