গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে তিতাসের যত টালবাহানা
সঞ্চিতা সীতু | প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২১ ০০:৪৪; আপডেট: ৭ জুন ২০২৩ ০১:৪৫

দীর্ঘ আড়াই মাসেও গ্রাহকের ডিমান্ড নোটের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক করতে পারেনি তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। জ্বালানি বিভাগ আবাসিক গ্রাহকদের কাছ থেকে জমা নেওয়া ডিমান্ড নোটের টাকা ফেরত দেওয়ার আদেশ জারি করেছে গত ডিসেম্বরে। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে এসেও সেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে কিনা, দিলেও কোন প্রক্রিয়ায় দেওয়া হবে, তা নির্দিষ্ট করতে পারেনি তিতাস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমরা এখনও জ্বালানি বিভাগের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। অপরদিকে জ্বালানি বিভাগ বলছে, আমরা তো গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছি। এরপরও আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকার কী আছে।
সম্প্রতি এক গণবিজ্ঞপ্তিতে তিতাস জানায় যে, যারা ডিমান্ড নোট জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু টাকা জমা দেননি, তাদের ডিমান্ড নোট বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু যেসব গ্রাহক ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়েছিলেন, তাদের কী হবে, সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি তিতাস। অথচ জ্বালানি বিভাগ বলছে, একসঙ্গে দুটো বিষয়েই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। যারা ডিমান্ট নোটের টাকা জমা দেননি তাদেরটি বাতিল করা। আর যারা ডিমান্ট নোটের টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া। কিন্তু তিতাস অর্ধেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে বসে আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল নুরুল্লাহ বলেন, ‘ডিমান্ড নোটের বিপরীতে যারা টাকা জমা দেননি, তাদের ডিমান্ড নোট আইন অনুযায়ী বাতিল করা হয়েছে। আর যারা টাকা জমা দিয়েছিলেন, তাদের টাকা অনলাইনে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা জ্বালানি বিভাগের আদেশের অপেক্ষায় আছি।’
জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা একইসঙ্গে তিতাসকে বলেছিলাম, যারা টাকা জমা দেননি তাদের ডিমান্ড নোট বাতিল করতে। আর যারা টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের টাকা অনলাইনে ফেরত দেওয়া যায় কিনা, সে বিষয়ে আলোচনা করতে।’
ডিমান্ড বাতিলের বিষয়ে পাঠানো গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিতাস গ্যাস অধিভুক্ত এলাকায় আবাসিক শ্রেণিতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য যেসব আবেদনকারী ডিমান্ড নোট ইস্যুর বিপরীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা দেননি, তাদের ডিমান্ড নোট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।’
তিতাস জানায়, সব মিলিয়ে আবাসিকের ৫৬ হাজার গ্রাহকের ডিমান্ড নোটের বিপরীতে ৪০ কোটি টাকা তিতাসের কাছে জমা আছে। জ্বালানি বিভাগের আদেশের পর তিতাস থেকে স্থানীয় অফিসের জিএমদের সঙ্গে বৈঠক করে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় টাকা ফেরত দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে না পারায় এখনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি তিতাস।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২১ মে আবাসিক, সিএনজি ও বাণিজ্যিকে ক্ষেত্রে নতুন করে আর কোনও গ্যাস সংযোগ না দেওয়ার জন্য আদেশ জারি করে সরকার। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ডিমান্ড নোটের টাকার কী হবে, সে বিষয়ে তখনও সরকারের তরফে কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এর ১৯ মাস পর গত ২৪ ডিসেম্বর জ্বালানি বিভাগ থেকে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গ্যাস সংকটের কথা বলে আবাসিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে ফের আবাসিকের সংযোগ চালু করে। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আবারও জ্বালানি বিভাগ থেকে অলিখিতভাবে বিতরণ কোম্পানিকে আবাসিকের নতুন আবেদন নিতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে লিখিতভাবে আবাসিক সংযোগ স্থগিত রাখার আদেশ জারি করা হয়। যদিও ২০১৩ থেকে ২০১৯ অবধি ডিমান্ড নোটের টাকা জমা নিয়েছে তিতাস।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: