দুদকে গিয়ে যা বললেন সমন্বয়করা
নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৪ ২১:২০; আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪ ২১:২০
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক কারণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যেসব ‘মিথ্যা’ মামলা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, দুদক যেন এসব মামলার বিষয়ে ‘বিবেচনা’ করে, সেই অনুরাধ তারা করেছেন। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সারজিস আলমের সঙ্গে ছিলেন আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তারা বলেছেন, আন্দোলনের সমন্বয়কদের নামে কেউ চাঁদাবাজি করলে, অন্যায় সুবিধা নিলে বা পদত্যাগে বাধ্য করতে চাইলে তাদের যেন আইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ সদস্যের একটি দল এদিন দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তারা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সারজিস আলম বলেন, “গত ১৬ বছরে দুদকের যে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে যেন তারা বের হয়ে আসতে পারে, সে বিষয়ে আমরা দুদকের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। দুদক যেন জনগণের আস্থার জায়গা ফিরে পেতে পারে।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ‘রাজনৈতিক কারণে’ দুদককে নিয়ে অনেক কাজ করিয়েছে এবং সেসব কাজ এ প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে মন্তব্য করে এ সমন্বয়ক বলেন, এখন থেকে সে ধরনের কিছু যেন আর না হয়, সেটা তারা ‘স্পষ্ট করে’ জানিয়ে দিয়েছেন।
“একটি চাপ প্রয়োগের বিষয়, কিংবা একটি চাঁদাবাজির বিষয়, কিংবা একটি মিথ্যা মামলার বিষয়– এসব বিষয়গুলা শুনতে পাচ্ছি। দুদক দিয়ে এখন এই কাজটি আসলে করানো হবে। এটা আমরা দেখেছি, অতীতেও এ কাজগুলো করানো হয়েছে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে, তার মধ্যে দুদকও একটি।”
সারজিস বলেন, “আমরা জাস্ট দুদককে স্পষ্ট ভাষায় জানাতে এসেছি আমাদের জায়গা থেকে যে, আমরা, ছাত্র জনতা ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে যে একটি গণ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছি, এই গণঅভ্যুত্থান এই স্পিরিট ধারণ করে না যে কাউকে আসলে মিথ্যা মামলা দেওয়া হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এরকম কোনো কারণে।
“কিংবা কোনো একটি চাঁদাবাজি করা হবে রাজনৈতিক পরিচয় দেখিয়ে। কিংবা চাঁদাবাজি করা হবে কোনো হুমকি দিয়ে। যে কাজগুলো গত ১৬ বছরে হয়েছে, সেই কাজগুলে যদি অন্য একটি গোষ্ঠী আবার রিপিটেশন ঘটায়, তাহলে দিনশেষে আমাদের যে স্পিরিট, সেই স্পিরিটের সাথে এই কাজগুলো সাংঘর্ষিক “
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দুদককে ‘স্পষ্ট বার্তা’ দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা কখনো এই কাজগুলো করি না এবং সমর্থনও করি না। কেউ যদি আমাদের নাম ব্যবহার করে এই কাজগুলো করে, তাদেরকে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এবং তাদের সাথে কম্প্রোমাইজের কোনো প্রশ্ন ওঠে না।”
পাশাপাশি পুরনো মামলাগুলোর বিষয়ে সারজিস বলেন, “বিগত ১৬ বছরে এই ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক কারণে যাদের পছন্দ হয়নি মিথ্যা মামলা দিয়েছে; কারো পরিবার নিয়ে সমস্যায় পড়েছে– মিথ্যা মামলা দিয়েছে; কারো এলাকা নিয়ে সমস্যা হয়েছে– মিথ্যা মামলা দিয়ে দিয়েছে। এই যে রাজনৈতিক কারণে যে মামলাগুলো হয়েছে, যেগুলোর আসলে সত্যতা নেই, ভিত্তি নেই, এগুলো যেন বিবেচনা করা হয়।
“আমরা আমাদের জায়গা থেকে এই অনুরোধটি জানাতে পারি, আমরা কোনো অথোরিটি নই যে আমরা বলতে পারি– এটা করেন। আমরা এটা বলেছি যে তখন যা হয়েছে, এখন থেকে যেন এমন না হয়।”
সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি আমাদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা চাওয়া হচ্ছে এবং সিগনেচার নকল করে বিভিন্ন জায়গায় মামলা দেয়া হচ্ছে। যে বিষয়গুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই। আমরা দুদকের কাছে এসেছি, আমরা খবর পেয়েছি আমাদের নাম ব্যবহার করে অসদুপায় সুবিধা নেবার চেষ্টা করা হয়েছে।
“আমরা এই বার্তাটি স্পষ্ট করতে এসেছি, আমাদের লিগ্যাল কোনো অথোরিটি নেই আমাদের নাম ব্যবহার করে বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধা নেবার বা দেবার এখতিয়ারও আমরা রাখি না । সিস্টেম সিস্টেমের মত করেই চলবে। আমরা দুদকের কাছে এই অনুরোধ নিয়ে এসেছি যে, দুদকের যে আইন রয়েছে, সেই অনুযায়ী সব চলবে। আমাদের নাম ব্যবহার করে যাতে কেউ বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধা আদায় করতে না পারে সেই বার্তাটি স্পষ্ট করতে এসেছি।”
তিনি লেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা নিজের পরিচয় ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারছে না, তারা ‘আন্দোলনকে বিতর্কিত করার অভিপ্রায়ে’, বিভিন্নভাবে সমন্বয়কদের নাম ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
“আমরা আপনাদের মাধ্যমে স্পষ্ট করতে চাই, আমরা যারা সমন্বয়ক হয়েছি এই আন্দোলনের, সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বিশেষ কোনো সুযোগ সুবিধা দাবি করতে পারি না। যারা এই পরিচয় ব্যবহার করে এই সুযোগ সুবিধা দাবি করবে, তাদের বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যে তাদের আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করে দেবেন।”
মিথ্যা মামলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনাগুলো তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় জোর করে পদত্যাগ, গণপদত্যাগের বিষয় রয়েছে। আমার একজনকে পছন্দ হচ্ছে না, গত ১৬ বছর ধরে হয়ত তার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল, এখন সেটিকে ব্যবহার করে, পদত্যাগ করানোর ঘটনা ঘটছে। পদত্যাগ বা এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। আমরা আপনাদের কাছে আহ্বান জানাব, এরকম গণদাবির মুখে পদত্যাগ না করে আপনাদের যে বিদ্যমান কাঠামো বা প্রক্রিয়া রয়েছে সেটিকে অনুসরণ করুন।
“কাউকে পদত্যাগ করানো, কাউকে পদে বসানো, চাঁদা তোলা বা চাঁদা দেয়া এই কাজগুলোর সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত না।” এ ধরনের প্রবণতাকে ‘লকারবন্দি’ করতে চান জানিয়ে আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, “আমরা একটি সিস্টেম ডেভেলপ করতে চাই, সিস্টেম সিস্টেমের মত চলবে। যেটা রাজনৈতিক পরিচয় বা অর্থনৈতিক পরিচয়ে প্রভাবিত করবে না।”
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: