মধুখালীতে নিহত বেড়ে ৯, ফরিদপুরের সড়কে একদিনে ঝরলো ১২ প্রাণ
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২১ ০৯:১১; আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৩৪

ফরিদপুরের মধুখালীতে ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। এছাড়াও এদিন জেলা সদর ও ভাঙ্গা উপজেলায় আরও তিন জন নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে ১২ জনের মৃত্যুতে জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এছাড়াও এসব দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ৫ জন আহত হয়ে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রবিবার (২১ মার্চ) সকালে ও দুপুরে পৃথক স্থানে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।
মধুখালীতে নিহত ৯ জনের মধ্যে একই পরিবারের ছয়জন। এদের মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। বাকি চারজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। আর অপর তিনজন পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নিহত অপর তিনজন হলেন ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাগানমাঠ গ্রামের অ্যাডভোকেট আব্বাস আলী (৪৮), তার ভাগিনা মাইক্রোবাস চালক আল আমিন (৩০) এবং গ্রাম মাতুব্বর নজরুল ইসলাম (৬০)।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কুদ্দুছ (৩০), নূরুন্নাহার (৩৫), আলামিন (২৫), রাশিদা (৩৫) ও আবদুল্লাহ (৪)। নিহতদের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কাজীর বেড় ইউনিয়নের সামন্তখোলা গ্রামে।
ফরিদপুরে তাদের মরদেহ বুঝে নিতে আসা কাজীর বেড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএন সেলিম রেজা জানান, নিহত জুয়েল রানার এক আত্মীয় গত বছর মারা গেছেন। ঢাকার একটি ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট ছিল। ওই অ্যাকাউন্টের টাকা উত্তোলনের জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন জুয়েল ও তার পরিবারের সদস্যরা। পথিমধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আর বিষয়টি আরও খোলাসা করে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মণ্ডল জানান, মাইক্রোবাসটির যাত্রীদের সবাই যাচ্ছিলেন ঢাকার সাভারের একটি ব্যাংকে থাকা একটি হিসাব (অ্যাকাউন্ট) থেকে টাকা তুলতে। তিনি জানান, এই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মিয়াজান বিবির ছেলে মোহর আলীর অ্যাকাউন্ট ছিল সেটি। ২০১৪ সালে স্ত্রী, ছেলে মেয়ে রেখে ঢাকার সাভারে চলে আসেন মোহর আলী। এখানে এসে তিনি হিজড়াদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের মতোই জীবনযাপন শুরু করেন ও নকল হিজড়া সাজেন। হিজড়াদের দলে থেকে বিপুল সম্পদের মালিক হন মোহর আলী। ব্যাংকে এই টাকা গচ্ছিত আছে। ২০২০ সালে মোহর আলী প্রতিপক্ষের ধরিয়ে দেওয়া আগুনে মারা যান। ছেলের এই টাকার মালিকানা দাবি করেন বৃদ্ধা মিয়াজান বিবি। আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে দুইজন আইনজীবী নিয়ে রবিবার মিয়াজন বিবির পরিবার ঢাকার সাভারে যাচ্ছিলেন। সকাল ৭টার দিকে তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি এলাকায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান জানান, হাসপাতালে আনার পর চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন মারা যান। এছাড়া ঘটনাস্থলে দুজন মারা যান।
এ সময় ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসে থাকা এক নারী ও এক পুরুষ নিহত হন। আহত হন মাইক্রোবাসের ১২ যাত্রী। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও সাতজন মারা যান। ট্রাকটি জব্দ করলেও চালক পালিয়ে গেছেন।
ঘটনার পর ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম রেজা, জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার সীমা রানী সাহা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, নিহত প্রত্যেককে ১৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। অন্যদের আর্থিক পরিস্থিতি দেখে সহযোগিতা করা হবে।
ভাঙ্গায় প্রাইভেটকার-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত আরও ২, ট্রলিচাপায় প্রাণ গেলো শিশুর
একই জেলার ভাঙ্গায় প্রাইভেট কারের চাপায় নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহী আরও দুই শিক্ষার্থী। রবিবার ভোরে ভাঙ্গা সদরের বিশ্বরোডের চৌরাস্তা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হন আরও একজন। তারা সবাই মোটরসাইকেলের আরোহী ছিলেন।
নিহতরা হলেন মোটর সাইকেলের আরোহী সাকিল খান (২২) ও নাইমুর রহমান। এরমধ্যে সাকিল খান (২২) ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের বিবিএ ৩য় বর্ষের ছাত্র। তার বাবার নাম শফিকুল খান।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশ জানান, রবিবার ভোরে সাকিল তার দুই বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে শিবচর থেকে ভাঙ্গা যাচ্ছিলেন। বিশ্বরোড চৌরাস্তা মোড়ে তাদের মোটরসাইকেলকে একটি দ্রুতগামী প্রাইভেট কার চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। আহত অপরজনকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া দুপুরে সদর উপজেলার বাকুন্ড এলাকায় ভাটার মাটি টানার কাজে ব্যবহৃত ট্রলির চাপায় সুমন শেখ নামে ১০ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সুমন বাকুন্ডার কালাম শেখের পুত্র। হাইওয়ে পুলিশের উপ পরিদর্শক মো. কাউছার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: