ঢাকা শুক্রবার, ৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

বন পুনরুদ্ধারের আহ্বানে বিশ্বজুড়ে পালিত হবে বন দিবস

সঞ্চিতা সীতু | প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২১ ০০:২১; আপডেট: ৯ জুন ২০২৩ ২৩:৪৬

সব ধরনের বন সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতি বছরের মতো আজ ২১ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হবে বন দিবস। করোনার আতঙ্কের মধ্যেই দিবসটি পালন করা হবে। এবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে  ‘Forest restoration: a path to recovery and well-being’ যা বাংলায় দাঁড়ায় ‘বন পুনরুদ্ধার: উত্তরণ ও কল্যাণের পথ’। 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছরই এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

 

দিবসটি উপলক্ষে বন অধিদফতর আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক মো.আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন,  উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমদ শামীম আল রাজীর। অনুষ্ঠানে সামাজিক বনায়নে উপকারভোগীদের মাঝে চেক বিতরণ করা হবে।

 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিবেচনায় আমাদের টিকে থাকার জন্য প্রাকৃতিক বন পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে তৃণমূল পর্যায়ে আরও সচেতনতা বাড়াতে সরকার কাজ করছে। এ লক্ষ্যে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। স্ব স্ব অবস্থান থেকে বনায়ন কার্যক্রম আরও বেগবান করতে হবে। বাংলাদেশ মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময় টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত নির্মাণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ ও মানবজাতির কল্যাণের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

এক কোটি চারা বিতরণ

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব বিষয়ে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ শুরু করেছিলেন।  দেশজুড়ে বৃক্ষরোপণ, উপকূল সংরক্ষণে বনায়ন, পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, হাওর-বাঁওড়, নদ-নদী ও অন্যান্য জলাভূমি সংরক্ষণ, ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম প্রতিষ্ঠাসহ প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগী কর্মকাণ্ড দৃষ্টান্তমূলক ও প্রশংসার দাবিদার। বঙ্গবন্ধুর এসব উদ্যোগ স্মরণীয় করে রাখতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জনগণের মাঝে বিনামূল্যে এক কোটি চারা বিতরণ করেছে।

টেকসই বন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ ও বনের প্রতিবেশ সংরক্ষণ

পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, জাতির পিতার নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দেশের বিদ্যমান বনাঞ্চল সংরক্ষণ এবং বনায়ন কার্যক্রম জোরদার করেছে। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই বন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ ও বনের প্রতিবেশ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ হেক্টর, যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ। এর মধ্যে বন অধিদফতর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ হেক্টর, যা দেশের আয়তনের প্রায় ১০ দশমিক ৭৪ ভাগ। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশের বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বেড়ে দেশের মোট আয়তনের ২২ দশমিক ৩৭ ভাগ এ উন্নীত হয়েছে। যা ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪ ভাগের বেশি উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

৩৮ হাজার ৬১৩ একর জমি জবরদখল

এদিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, কৃষিভূমি সম্প্রসারণ, আবাসন প্রভৃতি নানা কারণে সংকুচিত হচ্ছে বনাঞ্চল। ফলে দেশের বন ও বন্যপ্রাণী আজ হুমকির সম্মুখিন। সারা দেশে বনভূমির অবৈধভাবে দখলের প্রবণতা দেখা যায়। দেশের সংরক্ষিত বনভূমির এক লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর জমি জবরদখল হয়ে গেছে। অবৈধ জবরদখল উচ্ছেদের মাধ্যমে বনভূমি পুনরুদ্ধার ও তা সংরক্ষণে সরকার কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবৈধ দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে উঠা চরে বনায়নের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে ১৬০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ভূমি দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত উপকূলে জেগে উঠা দুই হাজার বর্গ কিলোমিটার চরে নতুন বন সৃজন করা হয়েছে। এসব বন একদিকে যেমন সবুজ বেষ্টনী হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করছে, অন্যদিকে উপকূলীয় জেলাসমূহে পর্যটনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

সামাজিক বনায়নের সুফল

এ পর্যন্ত সামাজিক বনায়নের আবর্তকাল উত্তীর্ণ গাছ আহরণ করে এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৪ জন দরিদ্র উপকারভোগীর মধ্যে ৩৫৬ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। একসময় যারা লোক চক্ষুর আড়ালে বন নিধনের কাজে ব্যস্ত থাকতো, তাদের অনেকেই এখন এই কর্মসূচির আওতায় নিশ্চিত উপকারভোগী হওয়ায় বন অধিদফতরের সঙ্গে মিলে বনজ সম্পদ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। ভূমিহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের খাদ্য, জ্বালানি, আসবাবপত্র ও আবাসন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মন্ত্রণালয় বনায়নে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অবক্ষয়িত ভূমি ও প্রান্তিক ভূমিতে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নারীদের সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বন অধিদফতর অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা-২০০৪ অনুযায়ী ৩০ ভাগ দুঃস্থ নারী উপকারভোগী হওয়ায় সুযোগ পেয়ে থাকেন। রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৭ অনুযায়ী গ্রাম সংরক্ষণ দল, পিপলস্ ফোরাম, সহ-ব্যবস্থাপনা সাধারণ ও নির্বাহী কমিটির প্রতিটি পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

সুন্দরবন সংরক্ষণ

বর্তমান সরকার সুন্দরবন সংরক্ষণে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। যার ফলে সুন্দরবনের বৃক্ষ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত জাতীয় বন জরিপের তথ্যমতে সুন্দরবনে মোট কার্বন মজুদের পরিমাণ ১৩৯ মিলিয়ন টন, যেখানে ২০০৯ সালে পরিচালিত জরিপ অনুসারে এর পরিমাণ ছিল ১০৭ মিলিয়ন টন। এছাড়া বন সেক্টরে কার্বন নির্গমন হ্রাস করার জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগে সামিল হয়েছে বাংলাদেশ। স্মার্ট পেট্রলিং এর আওতায় জিপিএস এর পাশাপাশি ড্রোন ব্যবহারের কার্যক্রমও ইতোমধ্যেই হাতে নেওয়া হয়েছে।

তবে সরকারের এইসব কাজের বিপরীতে সমালোচনা করেছেন পরিবেশবাদীরা। বাপার সহ সভাপতি আব্দুল মতিন বলেন, ‘সরকার সব সময় বন বাঁচাতে নানা উদ্যোগের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাই সুন্দরবন এখন ঝুঁকির মুখে। একের পর এক শিল্প-কারখানা স্থাপন হয়েই চলেছে। দূষিত হচ্ছে বনের বাতাস, পানি, প্রতিবেশ। ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়েও বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল নষ্ট করা হচ্ছে। আমরা এসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কথা বলছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বন বাঁচাতে হলে সরকারকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করা জরুরি।’




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top