বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: স্টিফেন ডুজারিক
নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২৪ ১৭:০৯; আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩০
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
সোমবার নিউ ইয়র্কে এক ব্রিফিংয়ে তার এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের খবরে তিনি উদ্বিগ্ন।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আজকে (সোমবার) ছাত্র বিক্ষোভ পুনরায় শুরুর খবর তিনি জেনেছেন এবং শান্ত ও নিবৃত্ত থাকার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
“বর্তমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হাজার তরুণ ও রাজনৈতিক বিরোধীকে গণগ্রেপ্তারের খবরেও মহাসচিব উদ্বিগ্ন। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ, মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের গুরুত্বের বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন।”
সব ধরনের সহিংসতার ঘটনার ‘দ্রুত, স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন’ তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকে ফের আন্দোলনে নামে। ধীরে ধীরে তাদের আন্দোলনের মাত্রা ও ব্যপ্তি বাড়তে থাকে।
১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘাতের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর থেকে ৬ জনের মৃত্যুর খবর আসে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা হয়, সেদিন মাঠে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। গোটা দেশে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পদে হামলা শুরু হয়। প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
রামপুরায় বিটিভি ভবন, মেট্ররেলের দুটি স্টেশন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট।
পরদিন পরিস্থিতির অবনতি হলে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করা হয় সারা দেশে। দুই দফায় তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে পুরো দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এই সময়ের সংঘাতে দুই শতাধিক মৃত্যুর খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। তবে সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা দেড়শ।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ডুজারিক বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতির বিষয়ে রাজধানী ঢাকায় এবং নিউ ইয়র্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে যাচ্ছি।
“আমরা আশা রাখছি, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে প্রধান সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশ মানবাধিকারকে সম্মান ও রক্ষা করবে।”
জাতিসংঘের মুখপাত্র জানান, বিক্ষোভ দমনে ‘ইউএন’ লেখা বাহন আর ব্যবহার হচ্ছে না বলে বাংলাদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের লোগো-সংবলিত বাহন যে কেবল শান্তিরক্ষী মিশনে ব্যবহার হতে পারে, সে বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতির বিষয়ে জাতিসংঘ কোনো সহায়তা করবে কি-না, এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, “সংকটের সময় সংলাপের ক্ষেত্রে যে কোনো দেশকে সহযোগিতা দিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত।
“পৃথিবীর কোথাও বিক্ষোভের সময় দুঃখজনকভাবে মৃত্যু বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের কোনো স্কিম জাতিসংঘের নাই।” সহিংসতার ঘটনার তদন্তে হস্তক্ষেপের বিষয়ে এক প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, “ম্যান্ডেটের আলোকে সহায়তা দিতে প্রস্তত আছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।”
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: