এইডস রোগীকে সামাজিকভাবে মেনে নেয় না
Saydur Rahman | প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:১৯; আপডেট: ২ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪৯
এইডস আক্রান্ত রোগীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয় বাংলাদেশে। ফলে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা লোকলজ্জার ভয়ে তাদের রোগের তথ্য গোপন করে। এইডসে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের সমাজে একঘরে করে রাখা হয়। তাদের সাথে কাউকে মিশতেও দেয়া হয়না। এমনকি এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে পরিবারের লোকজনও দূরে ঠেলে রাখে। ফলে রোগীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বেসরকারি সংস্থা ‘শিক্ষা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম’- শিসউকের তথ্য বলছে, আমাদের দেশে সর্বপ্রথম যার রক্তে এইচআইভি শনাক্ত হয়, মানুষ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করেছে পরিবার থেকে। উচ্ছেদ করেছে বাড়িভিটা থেকে। এমনও দৃষ্টান্ত আছে যে, রোগীকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল গরাদে। তাকে দেখতে জমেছে হাজারো মানুষের ভিড়। অনেকেই গালাগালি করে বলছে, ওকে গুলি করে মারা উচিত। কেউ বলছে, না গুলি করে নয়, পাহাড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আরেক দলের শঙ্কা, ছাই থেকেও ক্ষতি হতে পারে। একুশ শতকেও আমদের সমাজ থেকে মধ্যযুগীয় সেই কুসংস্কার দূর হয়নি! জানা যায়, বিশ্বে এইচআইভি সর্বপ্রথম শনাক্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮১ সালে। আর বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। কিন্তু প্রথম আক্রান্তের চার দশক পরেও আমরা অনেকেই জানি না, জানলেও মানি না যে, শুধু যৌন সঙ্গমই এইচআইভি সংক্রমণের একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য কারণেও মানুষ এইডসের নির্দোষ শিকার হতে পারে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, রোগ সম্পর্কে ভুল ধারণাই আজ এইচআইভি প্রতিরোধের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেডিকেল সায়েন্স বলছে, এইচআইভি ছোঁয়াচে নয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে, একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, একই পাত্রে খাবার ও পানি খেলে, আক্রান্ত ব্যক্তির সামগ্রী ব্যবহার করলে বা তার ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে এইচআইভি ছড়ায় না। কিন্তু সমাজে এ নিয়ে রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা। একঘরে হওয়ার ভয়ে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীরা তথ্য গোপন করতে বাধ্য হন। যা আমাদের জন্য আত্মঘাতী। জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডসের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে চিকিৎসা না নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রচলিত ধারণা হলো, এইচআইভি পজিটিভ মানেই এইডস। কিন্তু একথা ঠিক নয়। ইউএনএইডস বলছে, আক্রান্ত ৪৭ শতাংশ রোগীতে এইচআইভি জীবাণুর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে। কাজেই এই ৪৭ শতাংশ রোগী এইচআইভি প্রতিরোধে সফল হতে হলে সেবার পরিধি বাড়াতে হবে। তার আগে জরুরি হলো, এই রোগ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর করা। এইচআইভি প্রতিরোধে নিতে হবে ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ। গড়ে তুলতে হবে কার্যকর সামাজিক আন্দোলন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: