অনলাইনে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় জঙ্গিরা
সংবাদ প্রতিদিন | প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২১ ০৩:১১; আপডেট: ৭ জুন ২০২৩ ০২:৫০

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। ২০ থেকে ৩০ বছরের তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করে সদস্য সংগ্রহে চলে প্রথম ধাপের শুরু করে দাওয়াতি কার্যক্রম। প্রথম ধাপের ধর্মের নানা বিষয়ে অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গি কার্যক্রমে উৎসাহ দিতে মগজ ধোলাই-এর কাজ করে জঙ্গি সদস্যরা। প্রথম ধাপে সফল হলে পরবর্তীতে সংগঠনের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে তাদের শারীরিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়। এমনকী অস্ত্র পরিচালনার বিষয়টিও অনলাইনে পরিচালনা করে আসছে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। এমনটি বলছেন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা।
তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ফেক আইডি খুলে বিভিন্ন ধরনের দাওয়াতি কার্যক্রম নিয়ে উঠতি বয়সীদের নক করে তারা। ভিপিএন ব্যবহার করে ফেক আইডি পরিচালনা করায় তাদের কার্যক্রমের স্থান শনাক্ত করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে তাদের নজরদারিতে রাখছে এবং গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে।
এন্টি টেররিজম ইউনিটের তথ্যে জানা গেছে, ২০২০ সালে দেশে ৪১টি অভিযানে ৬৪ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় । যার মধ্যে নব্য জেএমবির ৪ জেএমবির ৩, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবিপি ১৪, আল্লাহর দল ১৫, আনসার আল ইসলাম ৩, উগ্রবাদ প্রচারকারী ৪। এছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে সাতটি অভিযানে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের অভিযানে ২০২০ সালে ১৯৭ টি অভিযান পরিচালিত হয়। যেখানে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৩৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৪৭ জনই জেএমবি সদস্য। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি।
এ বিষয়ে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিষয় যখনই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তখনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তারা বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এবং চলমান অভিযানে কারণে তাদের সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হবার সক্ষমতা নেই। সাংগঠনিকভাবে তাদের একটিভিটিজ নেই, অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাচ্ছে। যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তারা জামিনে বেরিয়ে এলে তাদের বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজর রাখছে।
তিনি বলেন, দেশে কোনও জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই। তবে সব বিষয় মাথায় রেখেই গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে জামিনে বেরিয়ে এসে তারা যেন আবার সেই পথে না হাটে সেজন্য পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় র্যাব ডি-র্যাডিক্যালাইজেশন প্রোগ্রাম চালাচ্ছে। যারা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে ফৌজদারি অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে দেখছে র্যাব। জঙ্গিবাদ থেকে নিজেদের সরিয়ে আনতে র্যাবের হটলাইনে অনেক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তথ্য পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এর মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারেনেস শাখার পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, যারা বিভিন্নভাবে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদে যাওয়াতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে সে বিষয়ে এটিইউ নজর রাখছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যারা জঙ্গিবাদ জড়িয়ে পড়ছে তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে। তবে এসরকারিভাবে আর্থিক অনুদান পেলেন দ্রুত এ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্তমানে প্রযুক্তিগতভাবে অনেক শক্তিশালী। তবে জঙ্গিরাও অনেক ফাঁকফোকর খোঁজে। এক রাস্তা বন্ধ হলে অন্য রাস্তায় হাটার সুযোগ খুঁজে তারা। তিনি বলেন, সাইবার বিষয় ছাড়াও যেকোনও ধরনের হামলা প্রতিহত করতে প্রস্তুতি থাকতে হবে। তবে এজন্য যেন, সাধারণ মানুষ কোনওভাবেই হয়রানির শিকার যাতে না হয় সে বিষয়েও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার কথা বলেন এই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: